ভোরবেলার দিকে কখন যে ঘুম এসে গেল, বুঝতেও পারিনি। সারারাতের হাওয়ার শোঁ-শোঁ শব্দ। তার সঙ্গে দূরের এক জায়গায় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর শব্দ, আবার কোথাও জঙ্গলে শিয়াল এবং কুকুরের আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে রাতে দু’বার হাতির আওয়াজও পেয়েছিলাম। হাওয়ার সঙ্গে ভেসে-আসা এসব শব্দ কখনও খুব জোরে, আবার কখনও আস্তে-আস্তে শুনতে পাচ্ছিলাম। প্রথমদিকে ভয় অবশ্যই হয়েছিল। এত ঘণ্টা পরে তার সব মিলিয়ে গেল প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে। ভোরবেলার দিকে হাওয়ার গতি কম থাকায় কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম, বুঝতেই পারিনি। সকাল সাতটার সময় ঘুম ভেঙ্গে দেখি, সারা প্রকৃতি আবারও নতুন সাজে সেজে উঠেছে, টেন্টের উপরে বিন্দু-বিন্দু শিশিরের কণা সূর্যের আলোয় হারিয়ে যাচ্ছে। আরও একটু সময় কাটিয়ে ভোরের পাখির ডাক, আর ক্যামেরাবন্দি করা কিছু ছবি নিয়ে সকাল আটটা নাগাদ জিনিসপত্র গুছিয়ে আবার দাদার বাড়ির দিকে রওনা হলাম। বাড়িতে কিছুটা সময় কাটিয়ে, চা-বিস্কুট এবং ব্রেকফাস্ট শেষ করে আমরা দশটার মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম বাইক নিয়ে সাত এবং নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দু’টি জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে। প্রথমটির নাম বামনি জলপ্রপাত, দ্বিতীয়টির নাম তুর্গা ফলস। বামনি জলপ্রপাতটি বেশ বড়, এটি দু’টি ভাগে বিভক্ত। উপরের অংশ থেকে নীচের অংশ যাওয়ার সেরকমভাবে রাস্তা না থাকার ফলে পাহাড়ের গা দিয়েই নামতে হয়। নামা-ওঠায় আপনার বেশ কিছুটা সময় চলে যাবে এখানে। নীচে বিস্তীর্ণ জলাধারা এবং নীচ থেকে ঝরনাটিকে দেখতে খুবই সুন্দর।
তারপর অযোধ্যা হিল রোড ধরে তুর্গা ফলস দেখে আমরা পৌঁছে গেলাম তুর্গা ড্যাম (বাঁধ)-এ। এই ড্যাম-এ বছরের দু’টি সময় আসার ফলে খুব সুন্দর ছবি রইল আপনাদের জন্য। এই ড্যামটি বেশ সুন্দর, এখানে চারিপাশে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত পরিষ্কার নীল জল আপনাকে অনেকক্ষণ আটকে রাখতে বাধ্য করবে। একটি পাম্প স্টেশন থাকার ফলে এই ড্যামটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।